শেয়ার বাজার

পাকস্থলী-পিত্তথলির ক্যান্সার বেশি তরুণী ও মধ্যবয়সী নারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩

পাকস্থলী-পিত্তথলির ক্যান্সার বেশি তরুণী ও মধ্যবয়সী নারীদের

দেশের মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ ক্যান্সার। বছরে এক লাখেরও বেশি মানুষ এ রোগে মারা যায়। দেহের স্থানভেদে কর্কট রোগ হয় বিভিন্ন প্রকার। আবার এক ক্যান্সারেরই রয়েছে অনেক ধরন। এর মধ্যে তরুণী এবং মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষের মাঝে পাকস্থলী ও পিত্তথলির ক্যান্সারে আক্রান্তের হার প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বিশেষ করে এ বয়সী নারীর মধ্যে এর আক্রান্ত ও মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারের পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদি এ রোগ বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) গত মার্চে ‘হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস অ্যান্ড রিলেটেড ডিজিজেস রিপোর্ট’ শিরোনামে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। তাতে বাংলাদেশের সব বয়সী নারী-পুরুষের ৩৩টি ক্যান্সারের বিভাজন দেখিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১৫-৪৪ বছর বয়সী নারীর মধ্যে পাকস্থলী ও পিত্তথলির ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বেশি। এ রোগে তাদের মৃত্যুও বেশি হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। 

আইএআরসি বলছে, ১৫-৪৪ বছর বয়সী প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ২ দশমিক ৬৭ জন পিত্তথলির ক্যান্সারে ভোগে, যেখানে পুরুষের আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ৪৭। একইভাবে প্রতি লাখে মৃত্যু হচ্ছে ২ দশমিক শূন্য ৮ নারীর ও শূন্য দশমিক ৩৭ পুরুষের। পাকস্থলীর ক্যান্সারেও এ বয়সী নারীর আক্রান্তের হার পুরুষের চেয়ে বেশি। প্রতি লাখে ১ দশমিক ৩৭ পুরুষ এ রোগে ভুগলেও নারী আক্রান্ত হচ্ছে ১ দশমিক ৫৭ জন। একইভাবে প্রতি লাখে শূন্য দশমিক ৮৩ জন পুরুষের বিপরীতে মৃত্যু হচ্ছে ১ দশমিক ১৩ নারীর। 

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) বলছে, পাকস্থলীর যেকোনো অংশে ক্যান্সার পাওয়া যেতে পারে। তবে এটি কতটা গুরুতর তা নির্ভর করে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তার ওপর। পিত্তথলির ক্যান্সারও খাদ্যের পরিপাকে বিশেষ ভূমিকা রাখা এ অঙ্গের যেকোনো অংশে পাওয়া যেতে পারে। 

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) ক্যান্সার রোগতত্ত্বের সাবেক অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার আছে। খুব স্পাইসি খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। অ্যাসিডিটির সঙ্গে সম্পর্ক আছে। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি বা এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ায় সৃষ্ট সংক্রমণের কারণে পাকস্থলীর ক্যান্সার হতে পারে। তারপর অ্যালকোহলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। অনেক সময় গলব্লাডারে স্টোন (পিত্তথলিতে পাথর) হয়, সেটা থেকেও সংক্রমণ হয়। নারীদের ক্যান্সারের সঙ্গে জীবনাচার ও খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক রয়েছে।’

সব বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে ক্যান্সার বিভাজনের ক্ষেত্রে আইএআরসি বলেছে, নারীর মধ্যে স্তন ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি। প্রতি লাখে ১৬ জন এ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এর পরে রয়েছে জরায়ুমুখের ক্যান্সার। এতে প্রতি লাখে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জনেরও বেশি। খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ৯ দশমিক ৩৪, পিত্তথলির ক্যান্সারে ৬ দশমিক ৫৫ এবং ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারে প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৬৮ জন আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার হচ্ছে খাদ্যনালীর, প্রতি লাখে ১৭ জন। এরপর ফুসফুসের ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এতে আক্রান্ত হচ্ছে ১১ দশমিক ৮ জন। তৃতীয় অবস্থানে ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ১১ জন পুরুষ। 

বাসি খাবার গ্রহণ পাকস্থলী ক্যান্সারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ জানিয়ে এনআইসিআরএইচের ক্যান্সার ডায়াগনস্টিকের সাবেক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘শুঁটকি ও অতিরিক্ত লবণ পাকস্থলীর ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। পিত্তথলিতে পাথর হলে সেখান থেকে ক্যান্সার হয়। এছাড়া খাদ্যে ভেজালেও এ ক্যান্সারগুলো হতে পারে। ঝাল, লবণ ও সংক্রমণের কারণে এসব ক্যান্সার প্রভাবিত হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের ক্ষেত্রে গলব্লাডারে ক্যান্সার বেশি হয়।’

বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে কোনো ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নেই। বছরে সারা দেশে কত রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বা মারা গেছে এমন হিসাব সরকারের কাছে নেই। তবে গ্লোবাল ক্যান্সার ইনসিডেন্স, মর্টালিটি অ্যান্ড প্রিভিলেন্স (গ্লোবোক্যান) পরিসংখ্যানের আলোকে আইএআরসি একটি হিসাব করেছে। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত রয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ২০২০ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ক্যান্সার রোগীর।

বিশেষজ্ঞরা যদিও বলছেন, দেশে বছরে তিন-চার লাখের মতো মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে দেড় লাখ। কোথাও এ হিসাব তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। প্রাক্কলিত রোগীর সংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ ক্যান্সার রোগী বছরে রোগ শনাক্তের বাইরে থেকে যায়। দেশে বিশেষায়িত পর্যায়ের (টারশিয়ারি) সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসার কমবেশি সুবিধা রয়েছে। তবে সরকারিভাবে একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল এনআইসিআরএইচ। সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার রোগীরাই চিকিৎসার জন্য দেশের সর্বোচ্চ এ হাসপাতালে আসে। তাদের তথ্যে তৈরি রেজিস্ট্রি দেশের ক্যান্সার রোগীর হিসাবের প্রতিনিধিত্ব করে। 

হাসপাতালটির ক্যান্সার রোগতত্ত্ব (ক্যান্সার এপিডেমিওলজি) বিভাগ সম্প্রতি ‘ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৮-২০’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৮৩ হাজারের কিছু বেশি রোগী চিকিৎসার জন্য বহির্বিভাগে এসেছিল। এর মধ্যে সাড়ে ৩৫ হাজারের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। দেশে সাধারণভাবে পুরুষের চেয়ে নারী ক্যান্সার রোগীদের হার বেশি। এ তিন বছরেও হাসপাতালটিতে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারীর হার ছিল ৫৫ শতাংশ।

শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রত্যেকটা ক্যান্সারের জেনেটিক (বংশগতি) প্রবণতা থাকে, সেই প্রবণতা জাতিতে জাতিতে বিভিন্ন রকম হয়। জেনেটিক কারণে বিভিন্ন জাতি এবং এমনকি এক জাতির বিভিন্ন ব্যক্তি বা বংশের মধ্যেও অনেক সময় জেন্ডারের প্রবণতা ভিন্ন হয়। এখন জেন্ডারের প্রবণতা থেকে জিনের যে প্রবণতা অনেক যুগ থেকে, অনেক জেনারেশন থেকেই হয় তো ছিল। রোগটা বীজের মতো। জিনটা বীজের মতো। বীজকে যেমন মাটি-পানি না দিলে সেটি গাছে পরিণত হবে না, তেমনি ক্যান্সারও পরিবেশের কারণে প্রভাবিত হয়। কোনো একটি জেনেটিক কারণ থাকে, তার সঙ্গে প্রবণতাটা বাড়ে। পরিবেশে কৃত্রিম খাবার, রঙ অর্থাৎ জীবনে কৃত্রিমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম উপাদানও বেড়েছে। এটাও ক্যান্সারের জীবাণুকে প্রভাবিত করে। এর প্রবণতাও বেড়ে গেছে।’

মানুষের ওজন আধিক্যের সঙ্গে ক্যান্সারের সুস্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে ডা. লিয়াকত আলী আরো বলেন, ‘আমাদের জীবনাচার, কায়িক শ্রম কমে যাওয়ার কারণে ওজন আধিক্য সৃষ্টি হচ্ছে। জীবনাচারের পরিবর্তন ও দূষণের সঙ্গে যে কৃত্রিম উপাদানগুলো বেড়ে গেছে তাতে বহুগুণেই ক্যান্সারসহ দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা পুরুষের মধ্যে বেশি আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর মধ্যে বেশি।’ 

জাতীয়ভাবে ক্যান্সারের কোনো রেজিস্ট্রি না থাকায় সারা দেশের চিত্র মূলত কেমন তা বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও হাসপাতাল, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের তথ্য দিয়ে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি তৈরির একটি পাইলট প্রজেক্ট করার চেষ্টা চালিয়েছি। সেখানে বিভিন্ন ক্যান্সার রোগী পেয়েছি। তবে তা কোনোটাই জাতীয় অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে না। আইএআরসি যে তথ্য দিয়েছে তা প্রাক্কলিত। এটা দিয়েও জাতীয় অবস্থা বোঝা যাবে না। জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় তাও তাদের রোগীদের। সমগ্র বাংলাদেশের তথ্য সেখানে নেই। আমরা পরিকল্পনা করেছি, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বড় পাঁচটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আমরা রোগীদের তথ্য নিয়ে কাজ করব। এতে কিছুটা ভালো তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া ক্যান্সারসহ সব অসংক্রামক রোগকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’

Dummy Ad 1

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৭ মৃত্যু, হাসপাতালে ২৫১ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৭ মৃত্যু, হাসপাতালে ২৫১ জন

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে সাতজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৫০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫১ জন। এ নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন দুই হাজার ৩৮৪ ডেঙ্গুরোগী।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬৪ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরের ১৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকায় চারজন মারা গেছেন। এসময়ে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন তিন ডেঙ্গুরোগী।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট তিন লাখ ১৬ হাজার ৪১১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ ৮ হাজার ৮১৮ জন। ঢাকার বাইরের দুই লাখ সাত হাজার ৫৯৩ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৩১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১২০ জন এবং ঢাকার বাইরের ৩১১ জন।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তিন লাখ ১২ হাজার ৩৭৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ ৭ হাজার ২৫০ জন এবং ঢাকার বাইরের দুই লাখ ৫ হাজার ১২৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ২৮১ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২০ সালে সাতজন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়।


চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজনই মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজনই মারা গেছেন

চলতি বছর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে নিপাহ ভাইরাসে পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন এবং পাঁচজনই মারা গেছেন। অর্থাৎ ২০২৪ সালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু শতভাগ। অন্যদিকে ২০২৩ সালে নিপাহ ভাইরাসে ১৩ জন আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০ জন। এতে ওই বছর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ছিল ৭৭ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আয়োজিত নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকিবিষয়ক একটি তথ্যনির্ভর উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর আক্রান্ত পাঁচজনের মাঝে দুজন শিশুসহ চারজন পুরুষ ও একজন নারী। এদের মধ্যে দুইজন মানিকগঞ্জের বাসিন্দা। বাকি তিনজনের বাড়ি খুলনা, শরীয়তপুর ও নওগাঁয়।

বক্তারা বলেন, খেজুরের কাঁচা রস থেকে নিপাহ ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার সুযোগ থাকে। আর এই নিপাহ ভাইরাস এ কারণে এ সময়েই ছড়ায় বেশি। নিপাহ একটি মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৭১ শতাংশ রোগীই মারা যান। তাই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে মানুষকে সাবধান হতে হবে।


বাংলাদেশে ভয়ংকর সীসা দূষণ, হৃদরোগে মারা যাচ্ছে লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশে ভয়ংকর সীসা দূষণ, হৃদরোগে মারা যাচ্ছে লাখো মানুষ

সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। একই কারণে দেশটির শিশুদের আইকিউ কমে যাচ্ছে, যার ফলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হবার ঝুঁকি বাড়ছে। চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে’ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘গ্লোবাল হেলথ বার্ডেন অ্যান্ড কস্ট অব লেড এক্সপোজার ইন চিলড্রেন অ্যান্ড অ্যাডাল্টস: অ্যা হেলথ ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড ইকোনমিক মডেলিং অ্যানালাইসিস’ নামের এই গবেষণাটি করেছেন বিশ্বব্যাংকের একদল গবেষক।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, সীসা দূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ। এর ফলে একদিকে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি শিশুদেরও আইকিউ কমে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির হিসেবে এর পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশটির ২০১৯ সালের মোটি জিডিপি’র প্রায় ৬ থেকে ৯ শতাংশের সমান। সীসা সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে শিশুদের। মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে।

বাংলাদেশের ২০১৯ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন যে, সীসা দূষণের ফলে দেশটিতে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী বাচ্চারা প্রায় দুই কোটি আইকিউ পয়েন্টস হারাচ্ছে। এতে শিশুদের বুদ্ধির যথাযথ বিকাশ হচ্ছেনা। ফলে নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে তাদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি আচার-ব্যবহারেও নানা অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, খাবারে অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ - এরকম নানা সমস্যাও তৈরি করছে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. প্রিসিলা ওবিল এ প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশে শিশুদের রক্তে উচ্চমাত্রায় সীসার উপস্থিতি তাদের মেধার পূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।এছাড়া সীসা দূষণের ফলে তাদের আইকিউ কমে যাচ্ছে, যা দেশটির সার্বিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই সীসা দূষণ বন্ধে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী।” ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজে’র তথ্যে দেখা গিয়েছিলো যে, সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। কিন্তু নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রকল্প সমন্বয়ক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “সীসা দূষণ রোধে এখনই উপযুক্ত সময়। এই সমস্যাকে সমূলে উৎপাটনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।”

সীসা দূষণের উৎস

ব্যাটারি ভাঙ্গা শিল্প, সীসাযুক্ত পেইন্ট, অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিল, খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত সিরামিকের পাত্র, ই-বর্জ্য, খেলানা, সার, রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মশলা, প্রসাধনী, খাবার-দাবার এবং চাষ করা মাছের জন্য তৈরি খাবার থেকেই মূলত: বাংলাদেশে সীসার দূষণ ঘটে।

প্রকাশিত গবেষণাটির অংশ হিসেবে খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০টি নমুনা সংগ্রহ করে সীসার উপস্থিতি পরিমাপ করে দেখেছে নিউ-ইয়র্ক ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘পিওর আর্থ’। এসব নমুনার মধ্যে খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত ধাতব ও প্লাস্টিকের পাত্র, সিরামিক পাত্র, রঙ, শুকনা খাবার, খেলনা, রান্নায় ব্যবহৃত মশলা এবং প্রসাধনী পণ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৪% নমুনাতেই মাত্রাতিরিক্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত ৫৯% ধাতব পাত্রে, ৪৪% সিরামিক পাত্রে, ৯% প্লাস্টিকের পাত্রে, ৫৪% পেইন্টে, ১৭% চাল/স্টার্চে, ১৩% খেলনায়, ৭% মশলায় এবং ৬% প্রসাধনীতে অতিমাত্রায় ক্ষতিকর সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে গড়ে প্রায় ৬.৮ মাইক্রোগ্রাম সীসা পাওয়া গেছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। তবে একজন মানুষের শরীরে কতটুকু সীসা থাকা নিরাপদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তার সঠিক কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি।